25 Nov 2024, 06:31 pm

ওসির ৬ মাসের প্রচেষ্টাতেই নাটকীয় পরিবর্তন ; আতঙ্কের হরিণাকুণ্ডু শান্তির নগরে পরিণত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

জাফিরুল ইসলাম ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবু আজিফ অপরাধ দমনের মাধ্যমে উপজেলায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে একজন কৌশলী পুলিশ কর্মকর্তায় পরিণত হয়েছেন। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, জুয়া, ইভটিজিং, নারী নির্যাতন, চোরাচালান, পারিবারিক কলহ’সহ বিভিন্ন অপরাধ থেকে হরিনাকুন্ডু উপজেলাকে অপরাধমুক্ত করতে নানান কৌশল অবলম্ভন করে অল্প দিনের মধ্যেই উপজেলাবাসীর কাছে প্রিয় ওসি’র সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন আবু আজিফ। তিনি হয়ে উঠছেন হরিনাকুন্ডু উপজেলার প্রিয় পুলিশ কর্মকর্তা।

জানা যায়, হরিনাকুন্ডু  থানার অফিসার ইনচার্জ হিসাবে আবু আজিফ চলতি বছরের ৩ এপ্রিল যোগদান করেন। থানায় যোগদানের পরপরই তার কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগে পাল্টে যায় হরিনাকুন্ডু উপজেলার দৃষ্টিপট। তিনি যোগদান করেই থানাকে ঘুষ ও দালাল মুক্ত করে সাধারণ মানুষের জন্য পুলিশি সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। তার ৬ মাসের চেষ্টায় সন্ত্রাস ও সামাজিক কোন্দলে জর্জরিত হরিনাকুন্ডুর জনপদে এখন শান্তির সুবাতাস বইছে।

চলতি বছরের ৩১ মার্চ ও ২৪ এপ্রিল হরিনাকুন্ডুর জোড়াপুকুরিয়া গ্রামে দুইটা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আবু আজিফ ওসি হিসবে যোগদানে এক মাসের মধ্যে তিনি ঐ দুই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন।

সন্ত্রাসী কবলিত হরিনাকুন্ডু থানার দায়িত্ব নিয়েই সন্ত্রাসী ও নাশকতার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেন ওসি আবু আজিফ। সন্ত্রাসীদের প্রতি ৩টি ‘অপশন’ দিয়ে তিনি বলেন, ‘থানায় এসে আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয়তো হরিনাকুন্ডু থানা এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে, অন্যথায় গ্রেপ্তার হয়ে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ সন্ত্রাসী ও নাশকতার সাথে জড়িতদের প্রতি এভাবেই হুলিয়া জরি করেন হরিনাকুন্ডু থানার ওসি আবু আজিফ। বিগত ছয় মাসে উপজেলায় একটিমাত্র বোমাবাজির ঘটনা ঘটলেও ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যে এর সাথে জড়িত বোমা মানিককে আটক করে হরিনাকুন্ডু থানা পুলিশ। আবু আজিফের যোগদানের পর থেকেই হরিনাকুন্ডুতে উল্লেখযোগ্য হারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নাশকতার পরিমান কমেছে বলে জানা যায়।

ওসি আবু আজিফকে প্রায় রাতেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ডিউটিরত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। পৌর শহর সহ উপজেলার ক্রাইম জোন হিসেবে চিহৃিত স্পটগুলোতে প্রতিরাতে ওসি আবু আজিফ নিজে পুলিশের গাড়ি নিয়ে টহল দিতে দেন।

থানার বিভিন্ন এলাকার যুবসমাজ যখন মাদকের ছোবলে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন মাদকের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি। ওসি আবু আজিফের দূর-দর্শিতার ফলে প্রায়ই উদ্ধার হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য এবং আটক হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী-পাচারকারী এবং মাদকসেবী।

গত ৬ মাসে ওসি আবু আজিফের নেতৃত্বে হরিনাকুন্ডু থানা পুলিশ উপজেলার প্রায় ৪০ জন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবিকে গ্রেপ্তার করেন।

হরিনাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি হওয়া ছিল অতি সাধারন ঘটনা। বিগত ৩ বছরে শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি হলেও কোন মোটরসাইকেল চোরকে সনাক্ত করতে পারছিলেন না হরিনাকুন্ডু থানা পুলিশ। ওসি আবু আজিফ যোগদানের ৩ মাসের মাথায় আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল চোর চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেন। এরপর থেকে উপজেলায় মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা কমে যায়। উপজেলার ‘রাশেদ ফার্নিচারে’ ভেন্টিলেটর ভেঙে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনার ১৫ দিনের মধ্যেই চোরকে সনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া উপজেলার ইজিবাইক ও ভ্যান চোরচক্রের অন্তত পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে হরিনাকুন্ডু থানা পুলিশ। এছাড়াও সামাজিক কোন্দল নিরসনেও তিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। থানায় যোগদানের তিন দিনের মধ্যে সাংবাদিক ও স্হানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে বসে তিনি বিভিন্ন এলাকার সামাজিক নেতৃত্বের তালিকা করেন। এরপর থেকে  তিনি ঐ সকল সামাজিক নেতৃবৃন্দের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন যাতে দ্রুততম সময়ে যে কোন ধরনের কোন্দল নিরসন করা যায়। ওসি আবু আজিফের যোগদানের পর থেকে সামাজিক কোন্দলের জেরে উপজেলার কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

আবু আজিফ থানায় যোগদানের পরপরই পুলিশের কর্মকান্ডেও পরিবর্তন এনেছেন। আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের দ্বারপ্রান্তে পুলিশের সেবা পৌঁছে দিতে বিট পুলিশিং কার্যক্রমের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছেন। কমে গেছে মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রবনতাও। শোষিত, নির্যাতিত, সম্পদের ভাগ-বণ্টন, পারিবারিক ছোট-বড় যে কোনো সমস্যায় সাহায্য নিতে থানায় আসা ব্যক্তিদের সততা-নিষ্ঠা ও ধৈর্যের সহিত হাসিমুখে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি । সেই সাথে থানার সকল অফিসারও ওসি আবু আজিফের দিকনির্দেশনায় সততা, ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। তার একান্ত প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতায় হরিনাকুন্ডু থানা এলাকায় পুলিশ ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমে এসেছে।

থানায় সেবা নিতে আসা উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দার আলী বলেন, এত সুন্দর মন মানসিকতার ওসি এর আগে আমরা পায়নি। তাকে কখনো পুলিশ মনে হয়না। মনে হয় আমাদের পরিবারেরই একজন। তবে কঠিন এবং কোমল- দুটো রুপই তার রয়েছে। অপরাধীদের নিকট তিনি মূর্তিমান আতংক।

আরেক সেবা প্রার্থী জুয়েল রানা বলেন, একটা সময় ছিল যখন সবার মনে করতো থানা মানেই হয়রানি আর ঘুষের কারবার। কিন্তু আমাদের সেই ধারনা এখন পাল্টে গেছে। থানাকে এখন সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা মনে হচ্ছে। এটার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে বর্তমান ওসি সাহেবের।

 

 

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 14227
  • Total Visits: 1308353
  • Total Visitors: 4
  • Total Countries: 1668

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং
  • ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল)
  • ২৩শে জমাদিউল-আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরী
  • এখন সময়, সন্ধ্যা ৬:৩১

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
    123
252627282930 
       
15161718192021
293031    
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018